একুশে মিডিয়া টিভি
কুমিল্লার দাউদকান্দিতে পরকীয়ার অপবাদে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে সালিশ ডেকে প্রকাশ্যে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কুমিল্লা জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সোমবার (১৩ আগস্ট) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ নির্দেশনা আসে বলেও জানান তিনি। এরই মধ্যে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।”
নির্যাতিত প্রবাসীর স্ত্রীর পক্ষে দায়েরকৃত মামলায় সালিশ বৈঠকে উপস্থিত স্থানীয় চেয়ারম্যানের নাম এজাহারভুক্ত না থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।”
তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দাউদকান্দি মডেল থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) মো: নুরুল ইসলাম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন তালুকদার ওই সালিশে উপস্থিত ছিলেন। তিনি এর দায় এড়াতে পারেন না। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।”
দাউদকান্দি থানার নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম জানান, নির্দেশ অনুযায়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কার্নিজ আফরোজকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। গত ১ আগস্ট দাউদকান্দি উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের বেকিসাত পাড়া গ্রামের প্রবাসী কবির হোসেনের স্ত্রীকে সালিশ বৈঠকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই নারীর বোন বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে দাউদকান্দি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পরে পুলিশ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দু’জনকে গ্রেফতার করে। ওই সালিশ বৈঠকে স্থানীয় ইউপি সদস্য চেয়ারম্যান মনির হোসেন তালুকদারের উপস্থিতিতে এমন নির্যাতনের ঘটনা কেন ঘটল উত্তর চেয়ে একটি শোকজ নোটিশ দিয়েছি। শোকজ নোটিশ সন্তোষজনক না হওয়ায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।”
দাউদকান্দি মডেল থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, মামলায় প্রধান আসামি সাইফুলসহ আরেক আসামি বাবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একজন আদালত থেকে জামিন নিয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।”
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো: আবুল ফজর মীর বলেন, সালিশ বৈঠকে প্রবাসীর স্ত্রী নির্যাতন ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে গত শনিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা আসে। দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করেছেন।”
উল্লেখ্য, দাউদকান্দি উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের বেকিসাত পাড়া গ্রামে সামাজিক বিচারের নামে জনসম্মুখে আসমা আক্তার নামে চার সন্তানের জননী প্রবাসীর স্ত্রীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়। স্বামীর ভাইদের যোগসাজশে এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতে সালিশ বৈঠকে ওই নারীকে পিটিয়ে পুরো শরীর থেতলে দেয়া হয়। প্রবাসী কবির হোসেনের স্ত্রী আসমা আক্তার ৪ সন্তানের জননী। তার এক পুত্র হাফেজ। আরেকজন মাদাসায় পড়ে। বাকি দু’জনের একজন কেজিতে পরে। আরেক জনের বয়স চার বছর।”
গত ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে ‘পরকীয়ায় জড়িত’ অভিযোগে পার্শ্ববর্তী বারপাড়া গ্রামের আলম নামে এক ব্যক্তিকে ডেকে এনে জোর করে আসমার ঘরে আটকে রাখা হয়।”
অভিযোগ উঠেছে, আটক দু’জনের উপর রাতভর দফায় দফায় নির্যাতন চালিয়েছেন প্রবাসী কবিরের ভাই সাইফুল, বাবুল, মিন্টু, মোস্তাক ও অপর এক ভাই খোকনের স্ত্রী শিল্পী। পরদিন ১ আগষ্ট সকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন তালুকদারের উপস্থিতিতে সামাজিক বিচারের আয়োজন করা হয়। এ সময় সালিশ বৈঠক চলাকালে প্রতিবেশি মিন্টু মাতব্বরদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লাঠি নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় আসমার উপর নির্যাতন চালায়। এছাড়াও বেধড়ক পেটানো হয় আটক আলমকেও।”
তাদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় ১ আগস্ট আসমার বোন বাদী হয়ে দাউদকান্দি মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত আসামি প্রবাসী কবিরের ভাই সাইফুল ও একই গ্রামের মৃত আবুল হাসেমের পুত্র বাবুলকে আটক করে পুলিশ। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- একই গ্রামের মোবারকের পুত্র মিন্টু, বারেক মিয়ার পুত্র মোস্তাক ও নির্যাতিতা আসমার জাঁ শিল্পী।। একুশে মিডিয়া।
No comments:
Post a Comment